রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১০:৩২ অপরাহ্ন

আপডেট
*** সিসি ক্যামেরা সিস্টেম নিতে যোগাযোগ করুন - 01312-556698  ***              সিসি ক্যামেরা সিস্টেম নিতে যোগাযোগ করুন - 01312-556698 ***                     *** সিসি ক্যামেরা সিস্টেম নিতে যোগাযোগ করুন - 01312-556698  ***              সিসি ক্যামেরা সিস্টেম নিতে যোগাযোগ করুন - 01312-556698 ***
সংবাদ শিরোনাম :

গুজরাটে বিজেপির পথের কাঁটা হার্দিক প্যাটেল

গুজরাটে বিজেপির পথের কাঁটা হার্দিক প্যাটেল

হার্দিক প্যাটেলের মধ্যেই কি তাহলে অশনিসংকেত দেখছে গুজরাটের বিজেপি? হয়তো তাই। নইলে গতকাল শুক্রবার সকালে নির্বাচনী ভাষণ দেওয়ার সময় হার্দিক কেন আক্রান্ত হবেন?

হার্দিক আক্রান্ত হন যেখানে, ভারতের লোকসভা নির্বাচনের সেই সুন্দরনগর আসনে জিততে কংগ্রেস এবার মরিয়া। সৌরাষ্ট্রের অন্য জেলাগুলোর মতো সুন্দরনগরও কৃষি সমস্যায় জর্জরিত। কৃষকদের সেই ক্ষোভ হাতিয়ার করে মাত্র ২২ বছর বয়সেই হার্দিক হয়ে যান রাজ্যের পাতিদার সমাজের নেতা। দেড় বছর আগে বিধানসভার ভোটে কংগ্রেসের নবজাগরণের প্রধান কারণও ছিলেন তিনি। মাসখানেক হলো হার্দিক আনুষ্ঠানিকভাবে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। প্রদেশ কংগ্রেসের নেতারা স্বীকারও করছেন, বাঘা বাঘা কংগ্রেস নেতার চেয়ে খর্বকায় হার্দিকের চাহিদা বেশি। হার্দিকের জন্য কংগ্রেস একটা হেলিকপ্টার বরাদ্দ করেছে। নইলে চাহিদা ও জোগানের বিস্তর ফারাক সামলানো অসম্ভব।

সেই হার্দিক গতকাল জনসভায় একজনের হাতে থাপ্পড় খেলেন। এর এক দিন আগে মহিষাগর জেলায় লুনাবাড়া গ্রামে শেষ মুহূর্তে তাঁর হেলিকপ্টার নামতে দেওয়া হলো না। তারও আগে রাজ্যে তাঁর আকাশপথে সফর নিয়ে বিস্তর জল ঘোলা হয়েছে। হার্দিকের মধ্যে অশনিসংকেতের আভাস না থাকলে গুজরাটের বিজেপি কি এমন আচরণ করে?

গান্ধীনগর ঘুরে বোঝা গেল, বিজেপির সদর দপ্তর ‘কমলম’ ২৫ বছরের হার্দিককে কেন ও কতটা গুরুত্ব দেয়।

অবশ্য শুধু হার্দিক নন, ভোট শুরুর অনেক আগে থেকেই গান্ধীনগরে বিজেপির বেতাজ বাদশা অমিত শাহর রাডারে ধরা পড়েছিল ত্রিমূর্তির মুখ। পাতিদার নেতা হার্দিক প্যাটেল, অনগ্রসর নেতা অল্পেশ ঠাকোর এবং দলিত নেতা জিঘ্নেশ মেওয়ানি। এঁদের ত্র্যহস্পর্শ বিস্মৃতপ্রায় কংগ্রেসের কাছে মৃতসঞ্জীবনী সুধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল দেড় বছর আগের বিধানসভা ভোটে। অমিত শাহ তখনই ঠিক করেছিলেন, রাহুল গান্ধীর কাছ থেকে এই তিনজনকে বিচ্ছিন্ন করা না গেলে লোকসভার ভোটে তাঁদের পস্তাতে হবে।

নিভৃত আলোচনায় বিজেপি নেতারা বলতে দ্বিধা করছেন না, অমিত শাহ ৫০ শতাংশ সফল। অসাফল্যের বাকি অংশের বেশিটা হার্দিককেন্দ্রিক, অন্য অংশ যাঁকে নিয়ে তাঁর নাম জিঘ্নেশ মেওয়ানি।

বিজেপির সাফল্যের প্রথম নমুনা অল্পেশ ঠাকোর। অল্পেশের বিখ্যাত হওয়ার পেছনে কিন্তু রাজনৈতিক কোনো আন্দোলন ছিল না। উত্তর গুজরাটের অনগ্রসর আদিবাসী সমাজকে মদের হাত থেকে মুক্ত করতে তিনি যে আন্দোলন শুরু করেন, সেটাই ছিল তাঁর বিখ্যাত হয়ে ওঠার সোপান। মদবিবর্জিত রাজ্যে স্থানীয় রাজনীতিকদের স্নেহচ্ছায়ায় থাকা বেআইনি মদের কারবার গুটিয়ে দিয়ে অল্পেশ যখন নাম করেছেন, রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী আনন্দিবেন প্যাটেল তার আগে থেকেই তাঁর প্রধান মুরব্বি। হার্দিকের পাল্টা হিসেবে দাঁড় করাতে বিজেপির স্বার্থে তিনি অল্পেশকেই বেছে নিয়েছিলেন। অল্পেশ যদিও সাড়া দেন রাহুলের ডাকে। রাহুল তাঁকে কংগ্রেসে স্থান দেন। ২০১৭ সালের ভোটে রাধানপুরে কংগ্রেসের জেতা আসন তাঁকে ছেড়েও দেন। ভোটে জিতে অল্পেশ হন কংগ্রেসের এমএলএ। শুধু তা–ই নয়, রাহুল তাঁকে বিহারের দায়িত্বও তুলে দিয়েছিলেন। রাহুল গান্ধীর বিশ্বাসের মর্যাদা অল্পেশ দেননি।

আনন্দিবেনের অসমাপ্ত কাজটা শেষ করেন অমিত শাহ। ভোটের আগে অল্পেশের কংগ্রেস ত্যাগের প্রধান কারিগর তিনিই। বিধানসভার আসন অল্পেশ ছাড়েননি। দলত্যাগ আইনবিরোধী হলেও রাজ্যটি বিজেপিশাসিত। বিধানসভার স্পিকারও বিজেপির। অতএব এখনো বহু দিন স্বতন্ত্র হয়েই থাকবেন তিনি। তা থাকুন। কংগ্রেস তো দুর্বল হলো।

শুধু অল্পেশই নন, কমলম–এর নেতারা বেশ গর্ব করেই বলেন, এখন পর্যন্ত মোট সাতজন কংগ্রেস বিধায়ককে দলত্যাগ করিয়েছেন দল সভাপতি। তাঁদের একজনের ছেড়ে দেওয়া আসনে উপনির্বাচন করিয়ে বিজেপি বিধানসভায় ‘সেঞ্চুরি’ করেছে। কংগ্রেস ৭৭ থেকে নেমেছে ৭০ আসনে, বিজেপি ৯৯ থেকে পৌঁছেছে ১০০–তে।

বিজেপির দ্বিতীয় টার্গেট ছিলেন জিঘ্নেশ। কিন্তু তাঁর বেড়ে ওঠা অল্পেশের মতো বিজেপির ছায়ায় ছিল না। ২০১৬ সালে সৌরাষ্ট্র অঞ্চলের উনায় গোরক্ষা বাহিনীর পিটুনিতে কয়েকজন দলিত যুবকের মৃত্যুর পর জিঘ্নেশ গড়ে তোলেন তাঁর আন্দোলন। শুরু হয় আহমেদাবাদ থেকে উনা পদযাত্রা। ২০ হাজার দলিত নরনারীর সেই যাত্রা জন্ম দেয় দলিত নেতা জিঘ্নেশের। তাঁর বিজেপিবিরোধী আন্দোলনে সাহায্যের হাত বাড়ান রাহুল। কংগ্রেসের সমর্থনে বদগাম আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জিতে বিধানসভায় আসেন। কিন্তু কংগ্রেসের ক্ষোভ, রাজ্যে বিজেপির বিরোধিতা না করে তিনি বিহারকে বেছে নিয়েছেন। সময় কাটাচ্ছেন বেশি বেগুসরাইয়ে, কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী কানহাইয়া কুমারের প্রচারে।

গুজরাট ও কংগ্রেস নিয়ে জিঘ্নেশের এই যে নির্লিপ্ততা, প্রদেশ নেতৃত্ব তার পেছনেও অমিত শাহর হাত দেখছে। রাজ্যে জিঘ্নেশের দেখা মিলেছে প্রচারের শেষ চার দিন আগে। যে দলের সাহায্যে তাঁর এমএলএ হওয়া, সেই কংগ্রেসের নামে জিঘ্নেশ ভোট চাইছেন না। সমালোচনার তির যদিও বিজেপির দিকে।

বিজেপি সামাল দিতে পারেনি শুধু হার্দিককে। তাও যে পুরোপুরি ব্যর্থ বলা যাবে না। হার্দিকের ভোটে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে আদালতের নিষেধাজ্ঞা তো বিজেপির দৌলতেই। তাঁকে পদে পদে বাধা দেওয়া বিজেপির চাণক্য অমিত শাহর কৌশল। কংগ্রেসের লাভ যত কমানো যাবে, ততই বিজেপির লাভ। গুজরাটের লড়াই তাই যতটা কংগ্রেস ও বিজেপির, ঠিক ততটাই বিজেপির সঙ্গে হার্দিক প্যাটেলের। কংগ্রেস নিধনে হার্দিকই পথের কাঁটা।


Search News




©2020 Daily matrichaya. All rights reserved.
Design BY PopularHostBD